ব্যবসায় পণ্য বা সেবার ধরে রাখতে এবং নকল থেকে নিজের পণ্য
বা সেবাকে আলাদা রাখতে হলে ট্রেডমার্ক করা জরুরি। যাতে
নির্দিষ্ট চিহ্ন দেখে অন্য কোম্পানির পণ্য থেকে নিজের পণ্যকে
আলাদা ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যেমন:- বাজারে বিভিন্ন
কোম্পানির মোবাইল ফোন ট্রেড মার্ক বা ব্রান্ড দ্বারায়
আলাদা করা যায়। বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ দ্বারা
যেকোন পণ্যের ট্রেডমার্ক করা যায়।
ট্রেডমার্ক কি
ট্রৈডমার্কের অপর নাম ব্রান্ড। ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি
স্বতন্ত্র চিহ্ন, ছবি, শব্দ, বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি যার দ্বারা
কোন নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করা যায় এবং সমজাতীয়
অন্যান্য সকল পণ্য বা সেবা থেকে আলাদা করে।
ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ এর ৮ এ বলা হয়েছে, কোন
নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক অথবা কোন পণ্যের বা সেবার সহিত
ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক যাহাতে ব্যবসায় উক্ত পণ্যের উপর
মার্ক ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার রহিয়াছে মর্মে
প্রতীয়মান হয়। কোন সেবা বা পণ্যের সহিত ব্যবহৃত বা
ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত এমন কোন মার্ক যাহার
স্বত্বাধিকারী বা নিবন্ধিত ব্যবহারকারী হিসাবে ব্যবহারের
অধিকার রহিয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়।
ট্রেডমার্ক প্রতীক কি?
R, TM, SM এই ৩টি প্রতীক দ্বারা ট্রৈডমার্কের ধরণ
সংজ্ঞায়িত করা যায়।
নিবন্ধিত বা রেজিস্টার্ড প্রতীক “R” ® (পণ্য ও সেবা)
যদি কখনো কোনও মার্ক, লোগো বা নকশার পাশে একটি বৃত্তের
মাঝে “R” ® থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ
দ্বারা নিবন্ধিত বা রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক। আমাদের দেশে
শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও
ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ট্রেডমার্ক নিবন্ধন দিয়ে থাকে। অ-
নিবন্ধিত ট্রেডমার্কে “R” ® প্রতীক ব্যবহার করা একটি
ফৌজদারি অপরাধ, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা
করতে পারে। আমাদের দেশে এমন নজীর আছে।
TM প্রতীক
পণ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজি অক্ষর TM ব্যবহার হয়। মূলত TM
(Trademark) হচ্ছে অ-নিবন্ধিত পণ্যের ট্রেডমার্ক প্রতীক।
তবে নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের ক্ষেত্রে TM প্রতীক ব্যবহারে বাধা
নেই। প্রকৃত পক্ষে একটি পণ্য নিবন্ধিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত
পণ্যটি ক্রেতা বা ভোক্তার সাথে পরিচিত (ব্যান্ডিং) করার জন্য
TM প্রতীক ব্যবহার করা হয়।
SM প্রতীক
পণ্যের ক্ষেত্রে TM এর মতোই অ-নিবন্ধিত সেবার ক্ষেত্রে SM
(Service Mark) প্রতীক ব্যবহার করা হয়। সেবা বলতে
হাসপাতাল, হোটেল, বিমান পরিসেবা ইত্যাদি।
ট্রেডমার্ক কেন প্রয়োজন?
একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা যেকোন আইন সিদ্ধ সত্ত্বাই
ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হতে পারে। সাধারণত ট্রেডমার্ক
পণ্যের মোড়কের গায়ে, চালানপত্রে অথবা পণ্যের রসিদে
অঙ্কিত থাকে।
এছাড়া সত্ত্বাধিকারীর ব্যবসায়িক স্থাপনায়ও এই প্রতীক
প্রদর্শিত হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র পণ্যের মালিকানা স্বত্ব দাবি
করার জন্য সাধারণত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা হয়।
সত্ত্বাধিকারী ব্যতীত অন্য কেউ কোন পণ্যের ট্রেডমার্ক নিয়ে
ব্যবসা করলে বা বিজ্ঞাপন দিলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ
এবং পরবর্তীতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হওয়া ছাড়াও এটি লাইসেন্সের
মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। সচরাচর বিভিন্ন নির্মাতা
প্রতিষ্ঠানসমূহ ট্রেডমার্কের লাইসেন্স করার মাধ্যমে ব্যবসা
পরিচালনা ও বিপণন করে থাকে। ট্রেডমার্কের অবৈধ ব্যবহার
করে নকল পণ্য বা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ব্রান্ড
পাইরেসি বলা হয়।
ব্রান্ড পাইরেসির শিকার হলে ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী
আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। অধিকাংশ দেশেই স্বত্ত্বধিকারীকে
আইনি সহায়তা পেতে হলে ট্রেডমার্কের নিবন্ধন করিয়ে নিতে
হয়।