যৌতুক নিরোধ আইনে যা আছে
যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর বিধান মোতাবেক যৌতুক গ্রহণই নয়, যৌতুক প্রদান ও
যৌতুক দাবি করাও শাস্তিমূলক অপরাধ। এ আইন অনুযায়ী যৌতুক দাবি করার কিংবা আদান-
প্রদানের এক বছরের মধ্যে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হবে। এই আইন অনুযায়ী দায়ী
ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছর মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা
উভয় শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে।
যৌতুকের কারণে মৃত্যু ঘটানো ও আঘাত করার সাজা
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী যদি কোনো নারীর স্বামী বা স্বামীর বাবা, মা,
অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য ওই নারীর মৃত্যু
ঘটান বা ঘটানোর চেষ্টা করেন, ওই নারীকে আহত করেন বা আহত করার চেষ্টা করেন;
তাহলে ওই স্বামী বা স্বামীর বাবা, মা, অভিভাবক, আত্মীয় বা ব্যক্তির শাস্তির বিধান
রয়েছে।
ক. মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদণ্ড বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে
দণ্ডিত হবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে ওই দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
খ. মারাত্মক জখম করার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা ৫ থেকে ১২ বছর
পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
গ. সাধারণ জখম করার জন্য এক থেকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং
ওই দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
যৌতুকের কারণে নির্যাতন বা যৌতুক দাবির সম্মুখীন হলে করণীয়
যৌতুকের দাবির সম্মুখীন হলে কোনো পক্ষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে আইনজীবীর
মাধ্যমে সরাসরি মামলা করতে পারে। যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় এ মামলা করতে হয়।
কাছের থানায় গিয়েও এজাহার করতে পারেন। আর যৌতুকের জন্য মারধরের শিকার হলে নারী
ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রথমে থানায় এজাহার করার চেষ্টা করতে হবে। এজাহার
কোনো কারণে পুলিশ না নিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট
প্রমাণ সহকারে মামলা করা যাবে। মারধরের শিকার হলে চিকিৎসা সনদ সহকারে মামলা
করা উচিত, না হলে মামলা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
যা জানতে হবে
বিয়ের সময় কাবিননামা নিজের সংগ্রহে রাখতে হবে। যৌতুকের শিকার হলে কাবিননামা ছাড়া
মামলা করা একটু কষ্টকর। অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী পক্ষ
তালাকের কথা গোপন করে মিথ্যা যৌতুকের মামলা করে, যাতে তালাক প্রত্যাহার করা হয়।
যৌতুকের মিথ্যা মামলা করলে মিথ্যা মামলাকারীকে শাস্তি পেতে হবে। যৌতুকের অভিযোগে
যে কেবল স্ত্রীই মামলা করতে পারবেন, তা নয়, স্ত্রী যদি যৌতুক দাবি করেন, স্বামীও
স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করতে পারেন। তবে স্ত্রী ভরণপোষণ ও
দেনমোহর বাবদ কোনো টাকা দাবি করলে তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না।