জি.আর (G.R) ও সি.আর (C.R) মামলা কি?

জি.আর (gr case) ও সি.আর (cr case) মামলা আজকের আলোচনার মূল বিষয়। জানবো জি আর ও সি আর মামলা কি? আইন বেশ জটিল এবং সূক্ষ্ম একটি বিষয়। বিস্তারিতভাবে এবং উদহারন দিয়ে অনেকে অনেক রকমভাবে আইনকে ব্যাখ্যা করতে পারেন। সাধারণত একটি বিষয় লক্ষ্য করি আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে মামলা নিয়ে অনেক জানার ঘাটতি রয়েছে।

  • জি আর (GR Case) ও সি আর (CR Case) মামলা কি?
  • সি আর মামলার (CR Case) ধাপসমূহ
  • জি আর মামলার (GR Case) ধাপসমূহ
  • আমলযোগ্য ও অ-আমলযোগ্য অপরাধ কি?
  • জি আর ও সি আর মামলায় জামিন
  • সম্পর্কিত কেস রেফারেন্স
  • আমাদের পরামর্শ

জি আর (GR CASE) ও সি আর (CR CASE) মামলা কি?

আইন বিষয়ে জানার ঘাটতির কারণে আমরা নিত্যদিন নানান হয়রানি বা সমস্যায় পড়ি। ফৌজদারি কার্যবিধি মূলত একটি পদ্ধতিগত আইন যেখানে বলা আছে কিভাবে বাংলাদেশের ক্রিমিনাল কেসগুলো বা মামলাগুলো চলবে। আদালত এবং আইনজীবীরা মূলত এই ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে মামলা পরিচালনা করেন এবং পুলিশ এই আইনের অধীন মামলা তদন্ত, গ্রেফতার ইত্যাদি করেন।

তবে অন্যান্য বিশেষ অনেক আইন রয়েছে যেগুলোতে আলাদাভাবে পদ্ধতি দেওয়া আছে। তবে মূল পদ্ধতিগত আইন হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধিকে মানা হয়।

এক কথায় যদি বলি থানায় যেসব মামলা এন্ট্রি হয় তা জি আর মামলা এবং আদালতে গিয়ে যে মামলা দায়ের করা হয় তা সি আর মামলা।

সি আর মামলার (CR CASE) ধাপসমূহ

অনেকেই বলেন আমি সরাসরি আদালতে গিয়ে মামলা করবো, এই যে আদালতে গিয়ে মামলা করা একে বলা হয় সি আর (CR case) যার পূর্ণরূপ কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার কেইস বা নালিশী মামলা। যে আদালতে মামলা করবেন সে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ শুনানি করে মামলা গ্রহণ কিংবা প্রত্যাহার করেন। বিশেষভাবে অ-আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে অভিযোগ জানাতে হয়।

তবে আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কেও আপনি চাইলে কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে মামলা দায়ের করতে পারেন সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার ধরণ অনুযায়ী সিধান্ত নেন যা সচরাচর থানাকে মামলা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় যা তখন জি.আর কেস কিংবা রাষ্ট্রবাদী মামলাও বলা যায়।

ফৌজাদারী কার্যবিধির ১৯০ ধারামতে ম্যাজিস্ট্রেট সি আর মামলা গ্রহণ করে থাকেন এবং ২০০ ধারামতে নালিশকারীকে হলফপূর্বক জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলা রুজু করেন।

সি আর মামলা গ্রহণের পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে অভিযোগ সম্পর্কে সন্দেহ আছে তাহলে তিনি সে মুহুর্তে মামলা গ্রহণ করে ২০২ ধারামতে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে ১৭৩ ধারামতে আদালতে রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন যে ঘটনার সত্যতা নেই তাহলে তিনি ২০৩ ধারামতে মামলা খারিজ করে দিতে পারেন।

এক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত চেয়ে নালিশকারী চাইলে নারাজী দাখিল করতে পারে। অথবা ম্যাজিস্ট্রেট নিজে চাইলেও পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।

এরপর ধাপে ধাপে মামলার বিচার শুরু হয়।

জি আর মামলার (GR CASE) ধাপসমূহ

জি.আর (G.R) মানে জেনারেল রেজিষ্ট্রার, থানায় যেসকল মামলা হয় তা জি আর (GR Case)। ফৌজদারী কার্যবিধির তফসিল অনুযায়ী দন্ডবিধির যেসব অপরাধ আমলযোগ্য সেসব অপরাধ কোন থানার এখতিয়ারাধীন এলাকায় সংঘটিত হলে থানা সরাসরি মামলা নিতে পারে যা জি আর কেইস।

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারামতে সাধারণত একটি জি আর মামলা শুরু হয় এ.আই.আর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) মাধ্যমে। জি আর মামলায় ১৫৬ ধারামতে পুলিশ তদন্ত করে থাকেন।

যা ফৌজদারি কার্যবিধির এই ধারা অনুসারে জি.আর কেস ফাইল হলে পুলিশ ইমেডিয়েট তদন্ত করে কিংবা অভিযোগের প্রাইমাফেসি (যা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা) নির্ধারণ করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেন, কোনরকম আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই।

সি.আর মামলায় আদালত সাধারণত তদন্ত শেষে সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে কেবল তা কার্যকর করা যায়। আইনের মতে সকল ধরণের আমলযোগ্য অপরাধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ সুতরাং সকল ক্রিমিনাল কেস এ বাদী রাষ্ট্র।

আমলযোগ্য ও অ-আমলযোগ্য অপরাধ কি?

আরেকধরণের কেস অবশ্য আছে যা আপনি না জানলেও চলবে তা হলো নন জি.আর (Non- G.R) যা জিডি থেকে মামলায় রূপ নেয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৫ ধারামতে এন জি আর বা নন জি আর মামলা হয়ে থাকে।

এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে আমলযোগ্য অপরাধ ও অ-আমলযোগ্য অপরাধ কোনগুলো? সেগুলো বলা আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩ নং শিডিউল এর ২ নং কলামে। গুরুতর অপরাধগুলোকে এখানে আমলযোগ্য বর্নণা করা হয়েছে। আর হালকা অপরাধগুলো অ-আমলযোগ্য বলা হয়েছে।

দন্ডবিধির অধীন ধারাসমূহের আলোকে ফৌজদারী কার্যবিধিতে কলামপূর্বক এসব বর্ণনা করা হয়েছে।

জি আর ও সি আর মামলায় জামিন

জামিন একজন অভিযুক্তের ন্যায্য অধিকার। যখনি কারো বিরুদ্ধে সি আর অথবা জি আর মামলা হয় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কেবল অভিযুক্ত বলা যায় অপরাধী নয়। কারো বিরুদ্ধে মামলা হলেই সে অপরাধী বলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত তাকে শাস্তি না দেয়।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধরায় জামিন সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধির তফসিলে উল্লেখিত যেসব অপরাধ জামিনযোগ্য আদালত সেসব অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিবেন। ফৌজাদারী কার্যবিধির তফসিলে দন্ডবিধির কোন কোন ধারা জামিনযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য সে সম্পর্কেও বলা আছে।

পাশাপাশি অন্যান্য বিশেষ আইনগুলোতেও জামিন বিষয়ে নিজস্ব বিধান দেওয়া থাকে। একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে রাখা উচিৎ যে জামিন সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি গ্রেফতার হলে বা কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া যেতে পারে, কিন্তু সে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধে অপরাধী বলে বিশ্বাস করার মত যুক্তিসংগত কারণ থাকলে তাকে উক্তরূপে মুক্তি দেয়া যাবে না।

তবে শর্ত এখানে আরও বলা হয়েছে যে, জামিন অযোগ্য কোন অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের নিম্ন বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিবার নির্দেশ দিতে পারবেন।

৪৯৭ ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে তদন্ত অনুসন্ধান বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, আসামী কোন জামিন অযোগ্য অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার মত যুক্তিসংগত কারণ নাই, তবে তার দোষ সম্পর্কে আরও তদন্তের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে, তাহলে এরূপ তদন্ত সাপেক্ষে আসামীকে জামিনে অথবা উক্ত অফিসার বা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতায় অতঃপর বর্ণিতভাবে সে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতিত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে হবে।

সম্পর্কিত কেস রেফারেন্স

একটি মামলার অবর্জাবশনে ৪৯৬ ধারার আলোকে বলা হয়েছে যে, জামিন অভিব্যক্তিটির মৌলিক ধারণা হল যেকোন ব্যক্তিকে পুলিশের হেফাজত হতে প্রতিশ্রত দাতার হাতে অর্পণ এবং উক্ত প্রতিশ্রুতিদাতা এমন ব্যক্তি যিনি আদালত যখনই আবশ্যক করেন তখনই আসামীকে আদালতে হাজির করার প্রতিশ্রুতি দেন। [5 DLR (FC) 154]

আরেকটি মামলায় ৪৯৭ ধারামতে বলা হয়েছে, আসামী জামিন পেলে সাক্ষীদের স্বাধীনভাবে সাক্ষ্য দিতে দিবে না এমন অনিশ্চিত অভিযোগের উপর জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা উচিত হবে না। অন্যদিকে আসামী জামিন পেলে যদি সাক্ষীদের ডর-ভয় দেখাবে এমন সম্ভাবনা থাকে তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেই ভাল করবেন। [22 Bom 539]

আমাদের পরামর্শ

ইদানিং সি.আর মামলার হার অনেক বেশি দেখা যায় তারমধ্যে অধিকাংশ মামলা আমলযোগ্য হওয়ার আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে নিয়মিত মামলা রুজু করতে নির্দেশ দেন। যখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন অভিযোগ নিতে অপারগতা বা অনীহা প্রকাশ করেন তখনই আপনি আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আইনের গতিপথ উন্মুক্ত যেকোন সময় যেকোন দিকে বাক নিতে পারে। সুতরাং আইনি যেকোন সিদ্ধান্ত ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞ আইনজ্ঞের পরামর্শক্রমে করা শ্রেয়। ধন্যবাদ।

Request for Call Back

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore,