একসময় লেনদেনের কোন মুদ্রা ছিল না। মানুষ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য লেনদেন করতো।
সময়ের পালাক্রমে মুদ্রা এসেছে। বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম এখন মুদ্রা। তাছাড়া
বর্তমান সময়ে আরো উন্নত হয়েছে বিনিময়ের মাধ্যম।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চেক কিংবা আদেশপত্র দ্বারা উন্নত লেনদেন
ব্যবস্থা চালু করেছে। চেক ব্যবস্থা একদিকে যেমন বিনিময়ের মাধ্যমকে সহজ করেছে
তেমনি অন্যদিকে এ মাধ্যমকে ব্যবহার করে জালিয়াতির ঘটনাও আজকাল হরহামেশায়
ঘটছে।
বড় বড় ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই এখন বড় অংকের লেনদেন করছে ব্যাংক
চেক দ্বারা। তার পাশাপাশি ব্যাংক চেক হয়ে উঠেছে জামানতের বড় একটি অংশ। ধরুন
আপনি ১০ লক্ষ টাকার মালামাল বিক্রি করেছেন , তার মধ্যে নগদ পাঁচ লক্ষ এবং
ব্যাংক চেকে পাঁচ লক্ষ টাকা আপনাকে প্রদান করা হলো।
আপনি যখন ব্যংক চেকটি নিয়ে ব্যাংকে নগদায়নের জন্য গেলেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ
জানালো চেকের সমমান টাকা সে একাউন্টে নেই। সুতরাং আপনি টাকা নগদায়ন করতে
পারলেন না। এখন আপনার কারণীয় কি?
বাংলাদেশে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ অথবা (Negotiable Instrument Act,
1881) নামে একটি আইন রয়েছে যেখানে চেক প্রত্যাখ্যান নিয়ে বেশ কিছু প্রতিকার ও
আলোচনা রয়েছে। সাধারণত এই আইনের ১৩৮ ধারা মোতাবেক চেক ডিজ-অনারের মামলা
করা যায়।
এখন দেখা যাক কখন একটি চেক ডিজ-অনার হয়। ব্যাংকের হিসাবে অপর্যাপ্ত তহবিল
বা অর্থ থাকলে তার মানে চেকে যে পরিমাণ অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে তা অপেক্ষা কম
অর্থ হিসাবে থাকা, যে ব্যক্তি চেক প্রদান করেছে যদি তার স্বাক্ষর না মেলে, যদি
চেকে উল্লেখিত অর্থের অংক ও কথায় মিল পাওয়া না যায়, চেক মেয়াদ উর্ত্তীণ হলে,
চেকে ঘষামাজা হলে, চেকে কাটাকাটি থাকলে এবং তা পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে সত্যায়িত করা
না হলে একটি ব্যাংক চেক ডিজ-অনার হতে পারে।
এসব কোন কারণে যদি চেক ডিজঅনার হলে আপনার প্রথম কর্তব্য চেক প্রদানকারীকে
অ-আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো। যদি কোন বিষয়ে অস্বীকার করে কিংবা সমাধান না দেয়
সেক্ষেত্রে এই আইন অনুযায়ী আপনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
১৩৮ ধারায় চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা সাধারণত আদালতে গিয়ে করতে হয়, থানায় করা
যায় না। যাকে আমরা সি.আর কেইস কিংবা কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার মামলা বলে থাকি।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, চেক ডিজ-অনারের মামলা করতে হলে অবশ্যই এর তামাদি
মানে লিমিটেশন থাকতে হবে অন্যথায় মামলা রুজু করা কঠিন হবে।
কারো কাছ থেকে চেক নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কিংবা মেয়াদউর্ত্তীর্ণের আগে চেকটি
নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে। যেদিন আপনার চেকটি ব্যাংক কর্তৃক
প্রত্যাখ্যাত হবে তার ত্রিশ দিনের মধ্যেই চেক ডি-অনারের স্লিপসহ আইনজীবীর
মাধ্যমে চেক দাতাকে চেক ডিজ-অনারের বিষয়ে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করতে হবে।
লিগ্যাল নোটিশ অবশ্যই প্রাপ্তিস্বীকারপত্রসহ চেক প্রদানকারীর শেষ বসবাসের
ঠিকানায় কিংবা ব্যবসায়ীক ঠিকানায় রেজিষ্টার্ড ডাকযোগে পাঠাতে হবে। এর পরে একটি
বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এসব কাজ হয়ে গেলে সব
কিছুর অনুলিপি প্রমাণ সমেত ঠিকঠাক তারিখ, চেক নাম্বার, নাম ও যথাযথ প্রয়োজনীয়
বিষয়াদি উল্লেখপূর্বক আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
চেক ডিজ-অনার ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবেই বিবেচিত হয়, যদিও সমন প্রাপ্তির পর
যদি আসামী আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করে সেক্ষেত্রে জামিন প্রদান করা
হয় এবং সমন পেয়ে হাজির না হলে আদালত ওয়ারেন্ট জারি করতে পারে সেক্ষেত্রেও
জামিন প্রদান করা যায়।