কোন মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে তার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থা করার জন্য যে
ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তা উইল। কোন মুসলমান ইসলামি আইন অনুযায়ী এরূপ কোন
ইচ্ছাপত্র দিলে তাকে অছিয়ত বলে। উইল এবং অসিয়ত একমাত্র দলিল যা
রেজিষ্ট্রি করার দরকার হয় না।
মৃত্যু শয্যায় কোন ব্যক্তি উইল করার পর বেঁচে উঠলে তার খাওয়া-পরার যাতে কোন
অসুবিধা না হয় সে জন্য উইলকারী কর্তৃক উইল বাতিল করার বিধান আছে। দান বা
হেবা সম্পন্ন হলে হেবা বা দানকারীর হেবা বা দান বাতিল করার কোন অধিকার থাকে
না। একই সম্পত্তি একাধিক ব্যক্তিকে উইলকারী তার জীবদ্দশায় উইল করতে
পরেন। সর্বশেষ যার নামে উইল করা হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর সেই উইলকৃত
সম্পত্তির মালিক হয়। হেবা বা দানের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যার নামে হেবা বা দান
করা হবে সেই সম্পত্তির মলিক হবে। হেবার ক্ষেত্রে হেবাকৃত সম্পত্তির দখল
হস্তান্তর না হলে হেবা সম্পন্ন হয় না। কিন্তু উইলের ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তর না
করলেও উইল বৈধ।
উইল বা অসিয়ত রেজিষ্ট্রি করার প্রয়োজন পড়ে না, রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৮
ধারামতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস আবেদন করলে উইল
সম্পর্কিত রেজিষ্ট্রার অন্তর্ভূক্তি করানো যায়। কোন হিন্দু ব্যক্তি তার সমূদয়
সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তিকে উইল করতে পারেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা
জজ আদালত হতে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। প্রবেট
‘জুডিশিয়াল কনফারমেশন’। মুসলমানদের অসিয়ত প্রবেট করার দরকার হয় না।
একজন মুসলমান তার সমূদয় সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উত্তরাধিকার
নয় এমন কাউকে উইল করতে পারে না। তবে উত্তরাধিকারদের মধ্যে মোট
সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উইল করতে পারে। ১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট
বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনত বৈধ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, অছিয়ত হলো আরবী শব্দ। যার অর্থ
ভবিষ্যৎ দান৷ কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কেমন করে বন্টন করা
হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বে লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারন করে যাওয়ার আইন
সম্মত ঘোষনাই হলো অছিয়ত ৷
অছিয়ত এর বৈশিষ্ট :
- ১। অছিয়ত নামা অছিয়ত কারীর মৃত্যুর পর কার্যকারী হয়৷
- ২। মুসলীম শরীয়ত মতে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি অছিয়ত করা যায় না ৷
- ৩। উইলকে মুসলীম শরীয়তে অছিয়ত নামা বলে৷
- ৪। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির যথাযথ বন্টন করার পদক্ষেপ নেন।
- ৫। অমুসলীমগন অছিয়ত এর যায়গায় উইল লিখে এর নমুনা ব্যবহার করতে পারেন ৷
- ৬। অছিয়ত নামা রেজিষ্ট্রি করার প্রয়োজন নেই। তবে অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর
সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতে দাখিল করে প্রবেট করাতে হবে ৷
অছিয়তের শর্তঃ
- ১। অছিয়তকারী তার সকল সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি অছিয়ত করতে পারবেন না ৷
- ২। অছিয়ত, অছিয়ত দাতার মৃত্যুর পর কার্যকারী হয়৷
- ৩। সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন যে কোন সাবালক ব্যক্তি উইল করতে পারেন ৷
- ৪। অছিয়তকারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে ৷
- ৫। অছিয়ত যে কেউ গ্রহন করতে পারেন ৷
- ৬। অছিয়ত নামা রেজিষ্ট্রি করার প্রয়োজন নেই। তবে অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর
যাদের উদ্দেশ্য অছিয়ত করা যায়ঃ
- ১। ব্যক্তির উদ্দেশ্যে
- ২। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে
ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল আবার দুই প্রকার :
- ১। ওয়ারিশের বরাবরে উইল ৷
- ২। ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল ৷
উইলের ফরম:
উইলের জন্য ইসলামী আইনে নিদিষ্ট কোন ফরম নেই। মুসলিমের উইল লিখিত না
হলেও চলে, মৌখিক উইলও আইনগতভাবে সিদ্ধ। তবে সংগত কারণে প্রায়
সবক্ষেত্রে উইল লিখিত হয়ে থাকে। লিখিত না হলে অসুবিধা অনেক। মুখের কথার
উপর সত্য প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন। উইল লিখিত হলে যে স্বাক্ষরিত হতে হবে
এমন কোন কথা নেই। স্বাক্ষরিত হলে প্রত্যায়িত হওয়া আবশ্যক নয়। উইলকারীর
অভিপ্রায় বুঝতে পারা গেলেই যথেষ্ঠ। মৃত্যুকালে একটি চিঠি লিখে সম্পত্তির
বিন্যাস সম্পর্কে নিদেশ দিয়ে গেলে সেই চিঠি উইলরুপে গন্য হতে পারে।
লেখা সম্ভব না হলেও, শুধুমাত্র ইশারা বা ভঙ্গীর মাধ্যমে উইল সৃষ্টি করা যায়।
নজির রয়েছে, মৃত্যুর সময় এক ব্যক্তি কথা বলতে অক্ষম হয়ে পড়ে। মৃত্যুর পরে
তার সম্পত্তির কি ব্যবস্থা হবে তা সে অংগভংগি দ্বারা বুঝিয়ে দেয়। সে কি বলতে
চায় তা সকলে বুঝতে পারে। এখানে আইনসংগত উইল সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিমের উইল
প্রত্যায়িত হওয়া অনাবশ্যক। কারণ কুরআন শরীফে সাক্ষ্য সম্পর্কে যে কথা
আছে তা নির্দেশমূলক নয়, উপদেশমূলক। উইলের জন্য স্বাক্ষরের দরকার নেই,
এমন কি সত্যায়িতও নয়। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ উইল অস্বীকার করলে তা
প্রমাণের জন্য দুজন স্বাক্ষী পেশ করতে হবে। বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে উইল
সম্পকিত বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
উদাহরণ-১। কালাম সাহেবের এর পুত্র ও কন্যা আছে। তিনি উইল করে ২৫,০০০
টাকা তার কনিষ্ঠ পুত্রকে এবং আরও ২৫,০০০ টাকা রহিম নামে একজন
অনাত্মীয়কে দান করেন। তিনি ৭৫,০০০.০০ টাকার নীট সম্পত্তি রেখে মারা যান।
কালাম সাহেবের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র ও কন্যা উইল কাযকরী করতে
অস্বীকার করল।
সমাধান: কনিষ্ঠ পুত্রের অনুকূলে ২৫,০০০ টাকার সম্পত্তি উইলের মাধ্যমে দান
বৈধ হবে। যদি অবশিষ্ট উত্তরাধিকারীগন তা উইলদাতার মৃত্যুর পর অনুমোদন
করে। প্রশ্নমতে, জ্যেষ্ঠপুত্র ও কন্যা উইলটি অনুমোদন করতে অস্বীকার
করেছিল। সুতরাং কনিষ্ঠ পুত্রের অনুকূলে উইলটি বাতিল হবে
একজন অনাত্মীয় রহিম উইলের মাধ্যমে ২৫,০০০ টাকা পেয়েছে। তার প্রাপ্ত
অর্থের পরিমাণ উইলদাতার কাছে সম্পত্তির ৭৫,০০০ টাকার এক তৃতীয়াংশের
অধিক নয়। সুতরাং উইলটির দান বৈধ হবে ।
উদাহরণ-২। জমির মিয়া মৃত্যর আগে তার স্ত্রীর অনুকূলে ২০০০ টাকার একটি
উইল করে যান। মৃত্যর পর তার দুই পুত্র উক্ত উইলে তাদের সন্মতি দেয় কিন্তু
তার দুই মেয়ে এতে সন্মতি দেয় নাই। জমির মিয়া তার স্ত্রী, দুই পুত্র এবং দুই
কন্যা ৩,০০০ টাকার মূল্যের সম্পত্তি রেখে মারা যান ।
সমাধান: এ উইলটির কোন আইনগত মূল্য নাই। কারন, জমির মিয়া তার সব
ওয়ারিশদের সন্মতি ছাড়াই এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তি তার স্ত্রীর সপক্ষে
উইল করেছে। জমির মিয়ার সম্পত্তি ৩,০০০.০০ টাকার মধ্যে তার স্ত্রীর অনুকূলে
২,০০০ একটি উইল করেছেন, যাতে তার পুত্র সন্মতি দিলে ও দুই কন্যা সন্মতি
প্রদান করেন নাই । অতএব উইলটি বৈধ নয়।
উপরোক্ত উদাহরণ থেকে বিষয়টি বোঝা গেল যে, উত্তরাধিকারীদের সন্মতি
প্রকাশ্য বা পরোক্ষও হতে পারে। যেইক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উত্তরাধিকারীগন
প্রায় ৭৫ বৎসর যাবৎ উইলটি চ্যালেঞ্জ করেন নাই, সেক্ষেত্রে তারা এতে
পরোক্ষভাবে সন্মতি দিয়েছেন বলে গন্য হয়। সন্মতি প্রদানকারী
উত্তরাধিকারীগণকে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বোধশক্তি সম্পন্ন হলেই চলবে এবং তারা
দেউলিয়া হলেও তাতে কিছু আসে যায় না ।তবে মনে রাখতে হবে, কোন মুসলিম তার
অন্যান্য ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে কেবলমাত্র একজন ওয়ারিশ বরাবরে উইল
করতে পারেনা । উইলকারী কতৃক উইলটি শর্ত সাপেক্ষে হলে তা উইলের সাথে
সংযুক্ত করে দিতে হবে । যদি কোন উইলকারী তার মৃত্যুর সময় জন্মগ্রহন করেনি
এমন কোন ব্যক্তির বরাবরে উইল করে, তবে উক্ত উইল বৈধ হবে না। কিন্তু উইল
করবার দিন হতে ৬ মাসের মধ্যে ভুমিষ্ট হলে মাতৃগর্ভের সন্তানের বরাবর উইল
বৈধ বলে গণ্য হবে । উইলদাতা ভবিষ্যতে পাবে এমন কোন সম্পত্তি উইল করতে
পারে না।
এছাড়া মুসলিম আইনের বিধান মতে, কোন ভাবী উত্তরাধিকারীকে উইল করা যায়না।
যদি কেউ উইল করবার সময় উত্তরাধকারী থাকে এবং উইলদাতার মৃত্যুর সময় যদি
না থাকে, তাহলে একে সম্পত্তির ১/৩ অংশ উইল করা হলে তা বৈধ হবে। আবার যদি
কেউ উইল করার সময় ওয়ারিশ না থাকে, কিন্তু উইল দাতার মৃত্যুর সময়ে ওয়ারিশে
পরিণত হয়, তাহলে সে উইলমূলে কোন সম্পত্তি পাবেনা।এধরনের উইল আইনবিরোধী
হবে। তবে উইল করবার সময়ে যদি কেউ ওয়ারিশ না থাকে, তাহলে উইলে তার অংশ
বৈধ থেকে যাবে। বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য নীচের উদাহরন দেয়া হলো:
হালিম মিয়ার একটি ভাই ও বোন আছে। হালিম তার ভাইকে কিছু সম্পত্তি উইল
করলো। হালিমের জীবিতকালেই তার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলো
।এমতাবস্থায় ফারায়েজ অনুসারে ভাই আর ওয়ারিশ হলো না। সুতরাং ভাইয়ের বরাবর
উইলটি বৈধ বলে গন্য হবে। রহিমের ভাই ১/৩ অংশ পর্যন্ত উইলের বলে দাবী করতে
পারবে। হালিমের পুত্র সন্তানটি জন্মগ্রহণ না করলে তা বৈধ হত না। কারণ ভাই
মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান বা পিতা না থাকলে ভাবী ওয়ারিশ থেকে যেত।
হান্নান সাহেবের এক পুত্র, স্ত্রী এবং পিতৃহীন এক পৌত্র আছে। হান্নান তার
সম্পত্তির ১/৩ অংশ পৌত্রকে অর্থাৎ নাতিকে উইল করলো এমতাবস্থায় উইল
বৈধ হবে, কারণ পুত্র বতর্মানে কোন মৃত পুত্রের পুত্র অথাৎ পৌত্র সম্পত্তি
প্রাপ্ত হয়না। আবার ১৯৬১ সালের ১৫ই জুলাই এর পরে হান্নান মারা গেলে তার
আগে মৃত পুত্রের পুত্র ওয়ারিশ হবে এবং পৌত্রের বরাবরে উইল বৈধ হবেনা ।
অতএব উপরোক্ত আলোচনায় বিচায বিষয় হচ্ছে যে, উইলের সময় কে ওয়ারিশ হবে
বা না হবে তা নির্ণয় করতে হবে উইলদাতার মৃত্যুর পর। কোন মুসলিম অমুসলিমের
অনুকূলে অনুরুপ কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির অনুকূলে উইল করতে
পারে। কেননা মানুষের প্রতি মানুষের সদাচারন প্রদর্শন আল্লাহর নিদের্শ ।
উইলে বিকল্প অর্পণ:
একটি বিকল্প উইল বা উইলে বিকল্প অর্পণ বৈধ। এক ব্যক্তি তার কন্যার
বরাবরে উইলে সম্পত্তি প্রদান করলো এবং তার মৃত্যুর সময় কন্যা মৃত থাকলে
কন্যার সন্তানগণ সম্পত্তি পাবে। এই ধরনের উইল বৈধ এবং কন্যার মৃত্যুর
কারণে তার সন্তানগণ উইল মূলে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবে। যেমন অপুত্রক কোন
রাশেদ মেনন তার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশটি উইলে এভাবে দান করলো, “আমার কোন
পুত্র সন্তান হলে এবং সে আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকলে, আমার সম্পত্তির
অবশিষ্টাংশটুকু তাকে দেবে, কিন্তু যদি ঐ পুত্র আমার জীবদ্দশায় কোন পুত্র
সন্তান রেখে মারা যায় এবং উক্ত পৌত্র যদি আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকে তাহলে
আমার নির্বাহকগণ সম্পত্তির উক্ত অবশিষ্টাংশটি দান হিসেবে প্রয়োগ করবে।
উইলকারী কোন পুত্র না রেখেই মারা গেল, স্থির হয় যে দানটি ভবিষ্যত শর্তযুক্ত
নয়। এটি একটি বিকল্প দান। তাই অবশিষ্টাংশটুকু দান হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
উইলের নিবার্হক:
উইলকারী স্বীয় ইচ্ছামত উইলের নিবার্হক নিযুক্ত করতে পারেন। কোন ব্যক্তি
তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য যাকে নিয়োগ করেন
তাকে ওসী বা নির্বাহক বলে। কোন ব্যক্তি নির্বাহক নিযুক্ত না করে মারা গেলে
আদালত একজন নির্বাহক নিযুক্ত করেন। নিবার্হক নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারে।
একজন মুসলমান তার উইলের নির্বাহক হিসেবে একজন খ্রীষ্টান, হিন্দু বা কোন
অমুসলমানকে নিযুক্ত করতে পারেন। একাধিক ব্যক্তি নির্বাহক নিযুক্ত হলে
প্রত্যেককেই যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
উইলের প্রবেট:
কোন উইল সরকারীভাবে কায়েম করতে হলে আদালতের কাছ হতে যে স্বীকৃতি নিতে
হয় তাকেই প্রবেট বলে। প্রবেট ছাড়া আদালত উইল গ্রহণ নাও গ্রহন করতে
পারেন। একজন মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত উইল যখন যথাযথ প্রমাণ দ্বারা
প্রমাণিত হবে, তখন কোন প্রবেট লাভ না করলেও তা সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।
উইল রদ বা প্রত্যাহার করণ:
মুসলিম আইনের বিধান মতে তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে।
উইলকারী তার জীবদ্দশায় যে কোন সময় তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে
পারে। কারন এটি তার জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি নয় এবং এর গ্রহন তার মৃত্যুর
পরেই অনুষ্ঠিত হয়। গ্রহণের আগে তা কার্যকরী হয় না। সুস্পষ্ট বাক্য দ্বারা বা
কার্যকালের মাধ্যমে উইল প্রত্যাহার করা যায়। এছাড়া উইল গ্রহীতা উইলদাতার
আগেই মারা গেলে উইল গ্রহীতা যদি উইলকারীর আগেই মারা যায় উইলটি বিলুপ্তি
হবে এবং উইলকৃত সম্পত্তি উইল দাতার সম্পত্তিতে পরিণত হবে।
পবিত্র কুরআনে অসিয়ত সম্পকে বলা হয়েছে
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যখন কারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন অসিয়ত করার
সময় তোমাদের মধ্য থেকে ধর্ম পরায়ণ দু’জনকে সাক্ষী রেখো। যদি তোমাদের
সন্দেহ হয় তবে উভয়কে নামাজের পর থাকতে বলবে। অতঃপর উভয়ই আল্লার নামে
কসম খাবে যে, যদিও কোন আত্মীয় হয় এবং আল্লাহর সাক্ষ্য আমরা গোপন করব
না। এমতাবস্থায় গোনাহগার হব।’ (সূরা আল মায়দা, ৫নং সূরা, আয়াত ১০৬)
‘তোমাদের কারও যখন মৃত্যু সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কোন ধন সম্পদ ত্যাগ করে
যায়, তবে তার জন্য অসিয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো। পিতা-মাতা নিকটাত্মীয়দের
জন্য ইনসাফের সাথে। পরহেজগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরি। নিশ্চিয় আল্লাহ
তা’আলা সব কিছু শোনেন ও জানেন।’ (সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা, আয়াত ১৮০)
‘যদি কেউ অসিয়ত শোনার পর তাতে কোন পরিবর্তন সাধন করে তবে যারা পরিবর্তন
করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে।’(সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা, আয়াত ১৮১)
‘যদি কেউ অসিয়তকারীদের পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের অথবা কোন
অপরাধমূলক সিদ্ধান্তের এবং তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেয়, তবে তার কোন
গোনাহ হবে না। নিশ্চই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।’ (সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা,
আয়াত ১৮২)
মৌখিকভাবে উইল করা হলে উইলের সাক্ষীদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নোটিশ
দিয়ে ডেকে পাঠাবেন। হাজির হলে তাদের জবানবিন্দ নিয়ে উইলের সত্যাসত্য যাচাই
করে মিউটেশন করে দিতে পারবেন। উইল করা হলে উইলকারীর মৃত্যু না হলে উইল
গ্রহীতার নাম কোন অবস্থাতেই মিউটেশন করে দেয়া যাবে না। উইলকারীর মৃত্যুর
পরই উইল কার্যকরী হয়।