কপিরাইট কী?
মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা সত্ত্বাধিকারী নিশ্চিত করাই
হচ্ছে কপিরাইট। সাহিত্য বা যেকোনো লেখা, শিল্পকর্ম,
সংগীত, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, লেকচার,
কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশা অর্থাৎ যা কিছু মৌলিকভাবে
তৈরি করা হবে, সবকিছুই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
কপিরাইট থাকলে বিনা অনুমতিতে সেগুলো ব্যবহার,
পুনর্মুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ ইত্যাদি করা হলে এই আইনের
আওতায় শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে।
ধরা যাক, একটি চলচ্চিত্র কেউ অবৈধভাবে ডাউনলোড
করে বা বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে দেখলেন, তার মানে তিনি
সেটির কপিরাইট লঙ্ঘন করলেন। বাংলাদেশেও কোন ব্যক্তি
যদি কপিরাইট দপ্তরে আবেদন করে নিজের স্বত্বাধিকার
তালিকাভুক্ত করতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে কপিরাইট দাবি
করা যাবে।
কপিরাইটের মেয়াদ
কপিরাইটেরও নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। যেমন সাহিত্য কর্মের
জন্য কবি বা লেখকের মৃত্যুর পর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত
কপিরাইট থাকে। তবে চলচ্চিত্র বা আলোকচিত্রের ক্ষেত্রে
প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত
কপিরাইট থাকবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের মেয়াদ
৬০ বছর, তবে কখন থেকে সেই মেয়াদ শুরু হবে, বিভিন্ন
ক্ষেত্র ভেদে সেটি আলাদা হতে পারে।
বাংলাদেশের কপিরাইট আইন
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রথম তৈরি হয় ১৯৭৪ সালে।
কিন্তু এরপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
সিডি, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে
সৃষ্টিশীলতা ও কপিরাইট ধারণারও বদল হয়েছে। পরবর্তীতে
২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন করা হয়, যা
পরে ২০০৫ সালে সংশোধন হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
তানজিম আল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "এই
আইনে সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম ও সাউন্ড
রেকর্ডিং কপিরাইট আইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়"।
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনে কি ধরনের শাস্তি আছে
জানতে চাইলে তিনি বলেন, "চলচ্চিত্র বাদে চারটি ক্ষেত্রে
সর্বোচ্চ চার বছরের জেল ও দু লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার
বিধান আছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ পাঁচ বছরের
জেল"।
বাংলাদেশের রেজিস্টার অফ কপিরাইটস জাফর আর চৌধুরী
বলছেন, এই আইনে প্রতিকার পেতে হলে তাকে মেধা
সম্পদটির অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে।
কোন ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন বেশি লঙ্ঘন হচ্ছে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে
সবচেয়ে বেশি কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলেন, "
গীতিকার কিংবা সুরকার বা শিল্পীর অনুমতি ছাড়া
বিভিন্নভাবে তাদের গান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আইনের
লঙ্ঘন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে হলেও সেটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা
যাচ্ছে"।
কিন্তু গীতিকার সুরকারের অনুমতি ছাড়া এখন অনেকক্ষেত্রেই
ব্যবহার করা হচ্ছে মূল সঙ্গীতকে। রিংটোন, ওয়ালপেপারে
সেট হচ্ছে অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে মূল মালিকের
অনুমতি ছাড়াই।
এছাড়া ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে নেয়া,
মোবাইল ফোন বা পেন ড্রাইভের ম্যাধমে গান বা চলচ্চিত্র
পাইরেসির ফলে এর নির্মাতার বিপুল আর্থিক ক্ষতির
মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
পাইরেসি বইয়ের বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে ঢাকার
নীলক্ষেত এলাকায়। কম্পিউটার মার্কেটগুলোয় বিক্রি হওয়া
বেশিরভাগ সফটওয়্যারও পাইরেসি করা, যা কপিরাইটের
লঙ্ঘন।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বই বা সফটওয়্যার বিদেশী
হওয়ায় কেউ কপিরাইট আইনে অভিযোগ করেননা বলে
এগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়না।
তবে কিছুদিন আগে র্যাব-পুলিশ গান বা চলচ্চিত্রের
পাইরেসির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেকগুলো দোকান
বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে
সেই অভিযান থেমে যাওয়ার পর আবার শুরু হয়েছে
পাইরেসির ব্যবসা।